কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

ফাইভজি নেটওয়ার্ক

চীনা কোম্পানি নিষিদ্ধে ইউরোপে খরচ বাড়বে ৬২ বিলিয়ন ডলার

চীনা কোম্পানি থেকে নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম ক্রয় নিষিদ্ধের কারণে ইউরোপে ফাইভজি প্রযুক্তি অবকাঠামো স্থাপনে অতিরিক্ত ৬ হাজার ২০০ কোটি (৬২ বিলিয়ন) ডলার ব্যয় হবে। শুধু তা-ই নয়, এ কারণে ফাইভজি চালুর ক্ষেত্রে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অন্তত ১৮ মাস পিছিয়ে পড়তে পারে ইউরোপ। খবর রয়টার্স।

গত মে মাসে বিশ্বের বৃহত্তম টেলিকম সরঞ্জাম নির্মাতা কোম্পানি হুয়াওয়েকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর থেকে বাকি বিশ্বও এ চীনা প্রযুক্তি জায়ান্টের সঙ্গে একে একে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করতে শুরু করেছে। বলা হচ্ছে, চাপে পড়ে ইউরোপও সে পথই অনুসরণ করছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, হুয়াওয়ের সরঞ্জামের সাহায্যে গোয়েন্দাগিরি করতে পারে বেইজিং। যেখানে ইউরোপ ও আমেরিকার টেলিকম অবকাঠামোর উল্লেখযোগ্য অংশ হুয়াওয়ের সরঞ্জাম দিয়ে তৈরি। তবে হুয়াওয়ে বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। যুুক্তরাষ্ট্রও তাদের দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ তুলে ধরেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের এ নিষেধাজ্ঞা এমন সময় এলো, যখন সারা বিশ্বের সেলফোন অপারেটররা পরবর্তী প্রজন্মের মোবাইল প্রযুক্তি ফাইভজি নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু করেছে। অতি উচ্চগতির এ মোবাইল ইন্টারনেট সেবা প্রদানের জন্য নেটওয়ার্ক ও সরঞ্জাম স্থাপন বাবদ বিপুল বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়নে চীনা হুয়াওয়ে ও জিটিই যৌথভাবে ৪০ শতাংশেরও বেশি বাজার অংশীদারিত্ব দখলে রেখেছে।

চীনা কোম্পানি নিষিদ্ধে ফাইভজিতে ইউরোপের ব্যয় বৃদ্ধির প্রতিবেদনটি দিয়েছে আন্তর্জাতিক টেলিকম লবি গ্রুপ জিএসএমএ। সারা বিশ্বের ৭৫০টি সেলফোন অপারেটর কোম্পানির সংগঠন এটি।

হুয়াওয়েকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার ফল নিয়ে এরই মধ্যে উদ্বেগ জানিয়েছে জিএসএমএ। কারণ ইউরোপে চীনা কোম্পানি দুটির টেলিকম সরঞ্জাম ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হয় এবং বিপুলসংখ্যক অপারেটর এ দুটি কোম্পানির সরঞ্জাম কেনে। অবশ্য একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জিএসএমএর প্রধান কয়েকটি সমর্থক কোম্পানির মধ্যে হুয়াওয়ে অন্যতম।

জিএসএমএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হুয়াওয়ে ও জিটিইর সরঞ্জাম কেনায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে ফাইভজি অবকাঠামো স্থাপনে ইউরোপের ব্যয় ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার বাড়বে। এ অতিরিক্ত ব্যয়ের অর্ধেক অর্থ মোবাইল সরঞ্জাম বাজারে উল্লেখযোগ্য হারে প্রতিযোগিতা কমে যাওয়ার কারণে বেশি দামে কিনতে খরচ হবে। আর বাকি অর্ধেক ফাইভজিতে আপগ্রেড করতে গিয়ে বিদ্যমান অবকাঠামো প্রতিস্থাপন বাবদ খরচ হবে।

অবশ্য ফিনল্যান্ডের টেলিকম সরঞ্জাম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নকিয়া দাবি করছে, ফাইভজির জন্য বিদ্যমান অবকাঠামো একেবারে বাতিল করতে হবে না। তারা ফোরজি অবকাঠামোকেই উন্নত করে ফাইভজি উপযোগী করে দিতে পারবে। আর এতে ভেন্ডর পরিবর্তন হেতু খরচ বৃদ্ধি ও জটিলতাও কমবে।

নকিয়া জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহেই তারা ফাইভজি সরঞ্জামের অর্ডারের হিসাবে হুয়াওয়েকে ছাড়িয়ে গেছে। ইউরোপের যেসব দেশ চীনা কোম্পানির সরঞ্জাম কেনা নিয়ে এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে, সেসব দেশ থেকে আরো অর্ডার পাওয়ার আশা করছে ফিনিশ কোম্পানিটি।

জিএসএমএ আরো বলছে, চীনা কোম্পানি নিষিদ্ধের কারণে ফাইভজি প্রযুক্তিতে ইউরোপ বেশ পিছিয়ে পড়বে। অন্তত ১৮ মাস পিছিয়ে যেতে পারে পুরো মহাদেশ। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যে ফারাকটা বাড়বে। ২০২৫ সাল পর্যন্ত ফাইভজি প্রযুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ১৫ শতাংশেরও বেশি পয়েন্টে পিছিয়ে থাকবে ইইউ। যেখানে এ প্রযুক্তি স্বচালিত গাড়ি, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যবহার করার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ পিছিয়ে থাকার প্রধান কারণ, চীনা কোম্পানি নিষিদ্ধের ফলে টেলিকম সরঞ্জামের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় এরিকসন, নকিয়া ও স্যামসাংয়ের মতো কোম্পানি সময়মতো সরবরাহ করতে ব্যর্থ হবে। এরপর বিদ্যমান ব্যবস্থা থেকে আরেকটি ব্যবস্থায় যাওয়ার প্রস্তুতি ও বাস্তবায়নেও টেলিকম অপারেটরদের সময় লাগবে।

পাঠকের মতামত: